আসসালামু আলাইকুম,গত পর্বে আমরা জেনেছি যে, প্রোডাক্ট ডিজাইন, ইউআই ডিজাইন এবং ইউএক্স ডিজাইন কি এবং কিভাবে কাজ করে। সেই সাথে আমরা Good UX এবং Bad UX সম্পর্কে জেনেছি। আজকে আমরা জানবো যে, গুড ইউএক্স এবং ব্যাড ইউএক্স এর মধ্যে ইউজার বা ব্যাবহারকারী কোনটা গ্রহণ করে।এই আর্টিকেলটি পড়ার পূর্বে অবশ্যই পূর্বের আর্টিকেলটি পড়ে নিবেন।

১ম পর্ব: https://cutt.ly/0lxHDgd

দানা তাসবীহ চেনেনা এমন মুসলিম খুবই কম। দানা গুনে গুনে যেগুলো পড়তে হয়। ২০১০ সালের কথা। আমার এক ওস্তাদ তিনি হজ্জ থেকে আসার সময় ডিজিটাল তাসবীহ নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো ছিলা সাইজে বড়। হাতে নিয়ে সুইচ চেপে চেপে তাসবীহ জপতে হতো। তখন চিন্তা করতাম আহ, যদি এই তাসবীহ টা আরেকটু ছোট হতো তাহলে আরো ভালো হতো।

এর ঠিক ২ বছর পর বের হলো আঙ্গুলের সাথে আংটির মত ঢুকিয়ে ব্যাবহার করার তাসবীহ। আমি বাড়িতে যাওয়ার সময় আমার আব্বা এবং আম্মার জন্য ২ টা নিয়ে গেলাম। আব্বা দুইদিন পরে আমাকে বললো তাসবীটার সাথে যদি একটা লাইট থাকতো আরেকটা সুইচ দিয়ে তাহলে অন্ধকারে দেখা যেত যে, কতবার তাসবীহ জপলাম। আমিও চিন্তা করে দেখলাম হুম, কথা ঠিক। লাইট হলে এটা আরো ভালো হতো।

এটাকে বলে প্রডাক্ট ডিসায়ারেবল বা User Need। অর্থাৎ এমন প্রোডাক্ট এর চাহিদা মানুষের মাঝে আছে। দানা তাসবীহ থেকে > ডিজিটাল তাসবীহ > ডিজিটাল আংটি তাসবীহ > ডিজিটাল লাইটযুক্ত আংটি তাহসবীহ। যদিও বাজারে এই প্রোডাক্টটি নেই কিন্তু ইউজার বিহ্যাভিওয়্যার এটাকে চাচ্ছে।

বাড়ি থেকে আসার প্রায় ১ বছর পরে একদিন বাইতুল মুকাররম গেলাম সেখানে হঠাৎ ই দেখলাম যে, আংটি তাসবীহ দুই ধরনের। একটা লাইট ওয়ালা আরেকটা লাইট বিহীন। এটাকে বলে প্রোডাক্ট ফাইন্ডেবল। অর্থাৎ সহজেই যাতে ইউজার তার কাক্ষিত প্রোডাক্টটি খুঁজে পায়। সেই সূদুর চায়নার প্রোডাক্ট কত সহজেই আমাদের হাতে চলে এসেছে, আমাদের দেশের মার্কেটে। এখন তো রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাওয়া যায়।

আমি সেটা দেখার সাথে সাথেই আবার ৩ টি কিনলাম। আব্বার জন্য, আম্মুর জন্য এবং আমার জন্য। কেনার পূর্বে ভালোভাবে চেক করলাম যে, এটা ঠিকঠাক গুনতে পারে কিনা। অর্থাৎ একবার সুইচ চাপ দিলে এক এক করে বাড়ে, নাকি একের অধিক বাড়তে থাকে। দেখলাম যে, নাহ, এটা ঠিক মতই এক এক করে তাসবীহর মত করে বাড়ে। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই প্রোডাক্টটি কিনলাম। এটাকে বলে প্রোডাক্ট ক্রেডিবল। অর্থাৎ বিশ্বাসযোগ্যতা। প্রোডাক্টটি ১০০% ক্রেডিবল নিশ্চিত করেই আমি সেটা কিনে নিলাম।

মার্কেট থেকে তখনও বের হইনি। কিছুক্ষণ পরে একজন লোককে দেখলাম যিনি একটা ব্যাগ কাধে নিয়ে দোকানদারদের জিজ্ঞাসা করতেছে যে, মানুষ কি ধরনের প্রোডাক্ট চায়। মানুষ কি চায় বলেন, আমরা আপনাদের সব বানিয়ে দিব। (আমার ভালভাবে খেয়াল নেই, তবে কথাগুলো এমনই ছিল

এটা হচ্ছে Usability Testing বা User behaviour testing এবং User Need Research। আংটি তাসবীহটিতে লাইট ছিল না। তারা মার্কেটে বের করার পরেই সেমভাবে দোকানদারদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, মানুষ এই তাসবীহ এর ব্যাপারে কি কি মন্তব্য করেছে। তারা হয়তো কোনভাবে জানতে পেরেছিল যে, মানুষ এটার সাথে একটা লাইট চায়। সে অনুযায়ী তারা তাদের প্রোডাক্ট পুনরায় ডেভেলপ করেছে। এটাই হচ্ছে Usability Testing। কোন প্রোডাক্ট প্রোপার রিসার্চের পর রিলিজ করার পরে ব্যাবহারকারীর লাইভ ফিডব্যাক নিয়ে পুনরায় সেটা ডেভেলপ করা।

হয়তো তারা এই ডিজিটাল তাসবীহ বের করার পূর্বেও এমন রিসার্চ করেছিল যে, মানুষ এমনটা চায় কিনা। সেটাই হচ্ছে User Need Research।

আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম, এনালগ তাসবীহ থেকে এই ডিজিটাল তাসবীহ অনেকটাই সহজ । অর্থাৎ প্রোডাক্টটি ইউসফুল। আর সহজেই এটা দিয়ে তাসবীহ গণনা করা যায়। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। অর্থাৎ প্রোডাক্টটি একসিসেবল এবং ইউজেবল। এটাকে একসেস করতে এবং ব্যাবহার করতে আমার কোন ধরনের কষ্ট হয়নি। বরং অনেক সুবিধা রয়েছে এটাতে।

১ম পর্বে আমরা জেনেছিলাম যে, একটা প্রোডাক্ট User Friendly হতে হলে ৬ টি ফিচার বা বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরী। যেগুলো সবগুলোই এই তাসবীহ এর মধ্যে রয়েছে। সুতরাং বলাই যায় যে, এটা একটা Good UX Product বা User Friendly Product and Design।

এছাড়াও প্রডাক্ট এর ভিন্নতায় এই ৬ টা ফিচারের ধরনও আলাদা হয়ে যায়। যারা থিম, সফটওয়্যার ইত্যাদী বিষয়ের প্রোডাক্ট তৈরী করেন তাদের প্রোডাক্টগুলোরও উপরোক্ত ৬ টা বৈশিষ্টের ধরন রয়েছে বিভিন্নভাবে। তা নিয়ে সামনে কোন এক পর্বে বিস্তারিত কথা বলবো ইনশা আল্লাহ।

ইউজার বিহ্যাভিওয়্যার এবং Bad UX ???

কয়েকদিন পরেই প্রচন্ড গরম চলে আসবে। কয়েক বছর আগে যাত্রাবাড়ীতে আখের রস খেলাম প্রচন্ড গরমের মধ্যে। আখের রসের সাথে মাছের বরফ মেশানো ঠান্ডা 😁 প্রচন্ড গরমে আমার কাছে ইউজার ফ্রেইন্ডলিই মনে হলো। 😁 (যদিও মাছের বরফের ক্রেডিবিলিটি নাই। যেকোন সময় পেট ডাইরেক্ট হতে পারে 😁 তবুও এই গরমে রাস্তার মধ্যে স্বস্তি পেতে এটাই আমার শেষ ভরসা 😁

খেতে খেতে ৩ গ্লাস খেলাম। কিন্তু কি অদ্ভুদ, অমার সাথে কয়েকজন এক গ্লাস খেয়েই দোকানদারকে বকতে বকতে চলে গেল এই বলে যে, ধুর !!! বরফ দিয়া আখের রসে পানি মিশাইয়া সেগুলা বেশি দামে বেচতাছে। যত্তসব দুই নাম্বারি !!! 🙄😟

বেচারা রস ওয়ালার মুখটা বেজায় বেজার। আমি বললাম মামা মন খারাপ কর কেন ! কথাতো আর মিছা কয় নাই 😁 রস মামায় দুই পাটির ৩২ টা দাঁত বের কইরা আমার সাথে সম্মতি জানালো। 😅

বিল দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি এখানে তাইলে UX কোনটা? ইউজার নিড ই বা কোনটা? আমি চাই ঠান্ডা আর আরেকজন বলে, এটা দুই নাম্বারি । চিন্তা করতে করতে আমি গাড়ীতে উঠতে ভুলে গেলাম। হেটেই চলে আসলাম শনির আখড়া 😌

অনেক দিন যাবৎ বাড়িতে যাই না। আব্বা আম্মু ফোন দিয়ে কয়েকবার যেতে বলছে। তাই একদিন ঠিক করলাম বাড়িতে যাই। ২০০৯ এর কথা। পদ্মা নদী পাড় হয়েই দেখলাম ওপাড়ে লোকাল বাসের সাথে ডাইরেক্ট আরেকটা বাস সার্ভিস চালু হইছে। ডাইরেক্ট শুনেই লাফ দিয়ে বাসে উঠে বসলাম। সিটও বেশ বড় বড়। চেয়ার কোচের মতই। কিন্তু সমস্যাটা বাধলো বসতে গিয়ে। কোনভাবেই আমার হাটু সোজা করে বসতে পারছি না। হেল্পারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, মামা এইডা কি বানাইছো? সিট বড় করছো ঠিকাছে, কিন্তু সামনে তো পা টান করার জায়গা নাই। হেল্পার মামায় এক ফালি হাসি দিয়া কইলো, মামা ডাইরেক্ট যামু, সিটের বাহিরে কোন যাত্রী নিমুনা। তাই সিটের সামনে জায়গা কম রাইখা বাসের মধ্যে সিট বেশি দিছে 😟😟😟 অহ আইচ্ছা, তাইলে এই কথা 😟

ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে ফিরে গুনে দেখলাম দেড় ইঞ্চি বাসের মধ্যে ৫৬ টা সিট বসাইছে। অন্তজেলা বাসগুলোতেও এত্তগুলা সিট থাকে না । 😦 কষ্টটা সেখানে না। কিছুক্ষণ পরে আমার পাশের সিটে এক বুড়া চাচায় বসেই সিটের উপরে পা তুলে আরাম বসেছে। আর বলতেছে বাহ, বাসটার সিট গুলোতো ভালোই বড় বড় । সুন্দর করে আরামে বসা যায়। হুজুর জানেন, ওই লোকাল বাস গুলোতে কত কষ্ট হয় বসতে ! 😦😦😬😬😬

ভাইরে ভাই, আমি হাসমু না কান্দুম বুঝতাছি না। এইখানে ইউজার নিড ই বা কি? UX ই বা কি !! Bad UX কোনটা আর Good UX ই বা কোনটা? ইউজার বিহ্যাভিওয়্যারের মাইরপ্যাচে সব কুপোকাত । 😬😬😬

আমার ছোট ছেলে হওয়ার পরে, আমার বড় আপা ফ্রান্স থেকে ৬ পিস গেঞ্জি পাঠিয়েছে। গেঞ্জিগুলো সামনে এবং পিছনের সাইডে নিচের দিকে একটু কোনাকোনা এক কথায় কোনাইচ্চা 😬 আপুরে জিজ্ঞাসা করলাম গেঞ্জিগুলো তো সুন্দর ই। কইত্থিকা কিনছো? আপু বললো, অমাদের এইখানে জিরো সাইজের পাতলা গেঞ্জি এগুলাই বেশি চলে। 🙂 বেশ ভালো 🙂

বাবুরে পড়ানোর পড়ে আমি খেয়াল করলাম বাবু যদি প্রসাব করে তাহলেই গেঞ্জিটা ভিজেঁ যাবে । কারণ নিচের দিকে একটু ঝুলানো। আমি বাবুর মাকে বললাম সাবধান। এটা একটু ভাজ করে রাখবা। পোলাপাইন কি আর সেগুলো মানে??? 🙄

যেই কথা সেই কাজ, ১ ঘন্টায় ৬ টা গেঞ্জিই ভিজাইলো। আমি আগের দিন ফুটপাত থেকে এক ডজন গেঞ্জি এনেছিলাম। সেগুলো পড়ালাম। বাহ, একটাও ভিজে না । নিজের দেশ নিয়ে গর্ব হতে লাগলো 😁😁😁

পরেরদিন পাশের বাসার আন্টি এসে বললো, আরেহ এই কোনাইচ্চা ডিজাইনের গেঞ্জিটাতো ভালোই। নিচের দিকে একটা সেফটিপিন লাগাইয়া বা একটা টিপ বোতাম লাগাইলেই এটা গেঞ্জি উইথ প্যান্ট হয়ে যাইবো । 😮😮 প্যামপাসের সাথে পড়াইতে পারবা। তাইলে গেঞ্জিও আর উপরের দিকে উঠবো না 😮😮

আমি চিন্তা করলাম হয়রে, বেটারা এত টাকা বেতন দিয়া কাটিং মাস্টার, মার্কেট রিসার্চার রাইখাও এইটা বুঝলো না। পাশের বাসার আন্টিরে হায়ার করলেইতো পারতো 😁😁😁

যাইহোক, ইউজার বিহ্যাভিওয়্যার অনেক কঠিন বিষয়। ১০০% সলভ করা সম্ভব নয়। কিন্তু অনেকটাই করা সম্ভব। আর্টিকেল বড় হওয়ার ভয়ে আজ এই পর্যন্তই 🙂 তবে এতক্ষণ যা যা পড়লেন এগুলো প্রত্যেকটিরই থিওরিটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল সমাধান রয়েছে। আমি শুরু বিভিন্ন ইউজারের বিহ্যাভিওয়্যারগুলো বললাম আজকে। সমাধান নিয়ে নেক্সট কোন একটা আর্টিকেল হবে ইনশা আল্লাহ।

ইনশা আল্লাহ পর্যায়ক্রমে এগুলো নিয়ে পর্ব লিখবো। ভালো লাগলে অবশ্যই উৎসাহ মূলক কমেন্ট এবং লাইক আশা করছি। আর অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার দিবেন। আর আমার সকল পোস্টগুলো পড়তে হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবেন। তবে হ্যাশ ট্যাগে সব পোস্ট পাবেন না। যেগুলো এই বছর থেকে করছি সেগুলোই পাবেন।

#learnwithtahmid

আরে কেউ কপি করতে চাইলে অবশ্যই আমার নাম এবং হ্যাশট্যাগ সহকারে কপি করবেন। আর চাইলে আমার নিয়মিত আপডেট পেতে আমার ব্যক্তিগতগ্রুপে এ্যাড হতে পারেন: https://fb.com/groups/learnwithtahmid

Writer: https://www.facebook.com/tahmid.hasan3