আসসালামু আলাইকুম,ইউআই ও ইউএক্স ডিজাইন এর নাম শুনেন নাই এমন ডিজাইনার খুব কম। নিজের গার্ল ফ্রেইন্ড এর নাম জিজ্ঞাসা করলে তা মনে করতে না পারলেও, যদি বলি ভাই, আপনি কোন ডিজাইন শিখতে চান? তখন এক লাফ দিয়ে বলবে “ইউআই/ইউএক্স ভাই, ইউআই/ইউএক্স” 😆😆😆UI/UX ডিজাইন অনেকের প্যাশন। কিন্তু অধিকাংশই জানেই না যে, এগুলো কি। কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করি ভাই UI/UX কি? তার সহজ সরল উত্তর, ভাই ওয়েব আর মোবাইল এপস ডিজাইন। আবার বর্তমানে কিছু কিছু ডেভেলপাররা নিজেকে UI/UX ডেভেলপার দাবী করে। ভাইরে ভাই আপনারা কি UI/UX বাংলালিংক দরে পাইছেন নাকি !? 🙃শুরুতেই কিছু কথা বলে রাখা ভালো, যদিও আমার অনেক গুলো আর্টিকেল রয়েছে এটার উপরে। তা হচ্ছে, UI ডিজাইন হচ্ছে UX এর একটা পার্ট। UX কে ডিজাইন বলার চেয়ে আমি UX Process বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। কেননা, একটা ডিজাইন কে Userfriendly করতে যে সকল প্রসেস বা কাজ করতে হয়, সে ধরনের বাজেট ওয়ার্ক আমাদের দেশে হয়না বললেই চলে। আর যারা ওয়েব ডিজাইন করেই, ইউএক্স এর কিছু রুলস এবং টার্মস পড়েই নিজেকে ইউএক্স ডিজাইনার বলেন। তাদের ডিজাইন গুলো বেশিরভাগ ই ভিজুয়াল ডিজাইন রুলস মেনে করা। যেটা সে নিজেও জানে না।

UI ডিজাইনের অদ্যপান্ত

UI Design মানে হচ্ছে User Interface Design। যাকে ভিজুয়াল ডিজাইন অথবা গ্রাফিক ডিজাইনও বলতে পারেন। ছোট করে বললে, আমরা আমাদের চোখ দ্বারা চারদিকে যে দৃশ্য দেখি সেগুলো হচ্ছে ইন্টারফেইস। তো কোন কিছু ডিজাইন করার সময় কালার, ফন্ট, শেপ, প্যাটার্ন, টেকচার ইত্যাদীর সঠিক ব্যাবহার করে আমরা যে ইন্টারফেইস টাকে একটা রূপ দান করি। সেটাই হচ্ছে ইউজার ইন্টারফেইস ডিজাইন।যারা প্রকৃতি প্রেমি তারা আবার বলবে ভাই, এ ইদুনিয়াতে এত সুন্দর প্রকৃতি, এইটা কি তাইলে ডিজাইন না? জ্বি ভাই, এটাও ডিজাইন তবে এটা আপনার আর আমার করা নয় 🙂 এটা মহান আল্লাহ তায়ালা করেছেন 🙂আপনার ব্যাবহৃত পোশাক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে যতই কিছুই আপনি দেখছেন সব কিছুই UI ডিজাইন এর অন্তর্ভূক্ত। তবে ডিজাইন সেক্টর আলাদা বা নাম আলাদা। কাজের পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ডিজাইন বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। যেমন: ফ্যাশন ডিজাইন, ব্রান্ডিং ডিজাইন, প্রিন্ট ডিজাইন, 2D ডিজাইন, 3D ডিজাইন, লেবেল ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, আইকন ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, মোবাইল এ্যপস ডিজাইন, সফটওয়্যার ডিজাইন, এসেম্বলি ডিজাইন ইত্যাদী অনেক কিছু। কিন্তু সকল ডিজাইন এর বাহ্যিক রূপ ই ভিজুয়্যাল ডিজাইন বা UI ডিজাইন এর অন্তর্ভূক্ত। আশা করি এটা জানার পর এখন থেকে আর বিভিন্ন সেক্টরের ডিজাইনাররা একে অপরকে ছোট করবেন না এবং মারামারি করবেন না 🙂এখন আবার কেউ বলবেন তাইলে ভাআআআই !!!!! জ্বি ভাই তাইলে আপনি বলতে পারেন আপনি ওয়েব ডিজাইন শিখবেন বা ওয়েব ইউআই ডিজাইন শিখবেন বা মোবাইল এপস ডিজাইন বা মোবাইল এপস ইউআই ডিজাইন শিখবেন। তাহলেই আপনার UI ডিজাইন পজিশন ক্রেডিট টা ধরে রাখতে পারবেন 😜UI ডিজাইন ৬ টি এলিমেন্ট এবং ৭টি প্রিন্সিপালস নিয়ে কাজ করে। এগুলোর আরো অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে কিন্তু মূল এই ১৩টি।

Element of Visual Design/UI Design

  1. Color
  2. Line
  3. Shape
  4. Texture
  5. Typography
  6. Form

Principles of Visual Design/UI Design

  1. Unity
  2. Balance
  3. Contrast
  4. Proportion
  5. Hierarchy
  6. Dominance
  7. Similarity

অনেকের মনেই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, ভাই গুগল করলে তো আরো বেশি পাওয়া যায়। জ্বি ভাই, এগুলোর ই শাখা প্রশাখা সহ আরো ব্যাপক কিছু রয়েছে। ইনশা আল্লাহ পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটা পার্ট নিয়েই লিখবো :)যারা এতদিন নিজেকে এক্সপার্ট ইউএক্স ডিজাইনার মনে করতেন। তারা একটু মিলিয়ে দেখবেন যে, উপরের ১৩ টা জিনিসের বাহিরে আর কোন কোন ফিচার আপনার ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে। তাহলেই বুঝে যাবেন যে, আপনি আসলে ভিজুয়াল এক্সপার্ট নাকি ইউএক্স এক্সপার্ট। 🙂

UX প্রসেসগুলো যেভাবে কাজ করে

যারা ওভার স্মার্ট তারা আবার নিজেকে UX ডিজাইনার দাবি করে। কিন্তু জানেই না যে, ইউএক্স কিভাবে ডিজাইনের ক্ষেত্রে কাজ করে। অনেক ইউএক্স ডিজাইনার রয়েছে, যারা আমাকে চুপেচুপে ফিসফিস করে ম্যাসেজে জিজ্ঞাসা করে “ভাই ! দেখলাম আপনি প্রোডাক্ট ডিজাইনার লিখে রাখছেন আপনার প্রোফাইলে। এই প্রোডাক্ট ডিজাইন আবার কি? প্রিন্ট ডিজাইন??? 🙄” 😁😁😁😆এখানে মূলত ইউআই এবং ইউএক্স এর পার্থক্যটা শুরু। ইউআই কাজ করে ইন্টারফেইস নিয়ে আর ইউএক্স কাজ করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রোডাকশন নিয়ে। যখন আপনি আপনার ডিজাইনকে সেই ডিজাইন যিনি ব্যাবহার করবেন, তার জন্য সহজে ব্যাবহারযোগ্য, ব্যাবহারিক সময়ের সকল প্রবলেম সলভ করতে পারবেন। তখন সে ডিজাইনটি হবে User Friendly Design।আপনি ডিজাইনার, সুতরাং ডিজাইন হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি বইয়ের লেখক, সুতরাং বই হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি চেয়ার নির্মাতা, সুতরাং চেয়ার হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি কলম নির্মাতা, সুতরাং কলম হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি জুতা নির্মাতা, সুতরাং জুতা হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি বিমান নির্মাতা, সুতরাং বিমান হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি রকেট নির্মাতা, সুতরাং রকেট হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি মগ নির্মাতা, সুতরাং মগ হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি ঘড়ি নির্মাতা, সুতরাং ঘড়ি হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি টেবিল নির্মাতা, সুতরাং টেবিল হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। এমনিভাবে, আপনি ওয়েবের থিম বানান, সুতরাং সেই থিম হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি সফটওয়্যার নির্মাতা, সফটওয়্যার হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট। আপনি থিম ডিজাইন করেন, সুতরাং সেই ডিজাইন হচ্ছে আপনার প্রোডাক্ট।যখন আপনি আপনার প্রোডাক্ট তৈরী করতে চাইবেন, তখন প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে, সেই প্রোডাক্ট রিলেটেড তথ্যের। মনে করুন আপনি একটা কম্পিউটার টেবিল বানাবেন। তখন আপনার টেবিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দরকার। টেবিলের উচ্চতা, প্রশস্ততা ইত্যাদী। আপনি টেবিল নির্মাণ করলেন সেটা প্রোডাক্ট হয়ে গেল।কিন্তু যখন কম্পিউটার সেট করলেন টেবিলের উপরে তখন আপনি খেয়াল করলেন যে, সিপিইউ থেকে ক্যাবলগুলো মনিটরে লাগানোর জন্য কোন ছিদ্র আপনি করেননি। কিবোর্ড থেকে ক্যাবলটি সিপিইউতে লাগানোর জন্য কোন ছিদ্র নেই। তখন সেই টেবিল ডিজাইনটি হবে Bad UX Prodcut।কিন্তু যখন আপনি টেবিলটি ডিজাইন করার জন্য তথ্য কালেক্ট করেছেন। তখন যদি কম্পিউটার টেবিল ব্যাবহার যারা করতেছে, তেমন কোন ইউজার বা ব্যাবহারকারীর সাথে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে, ব্যাবহার করার সময়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেগুলো আগেই নির্ধারণ করে, সেই প্রবলেমগুলো সলভ করে টেবিলটি ডিজাইন + ডেভেলপমেন্ট করতেন। তাহলে সেই টেবিলটি হতো User Friendly Design।আর এই টোটাল প্রসেসের মধ্যে টেবিলের ডিজাইনটি ই হচ্ছে UI এর অংশ। বাকি গুলো সঠিক প্রসেস করতে পারলে UX এর পার্ট। আশা করি ইউএক্স কি, ইউআই কি এবং প্রোডাক্ট ডিজাইন কি, তা আপনার সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন।আসুন এবার জেনে নেই, একটা প্রোডাক্টকে User Friendly করতে কি কি প্রসেসগুলো জানা দরকার বা মাথায় রাখা দরকার। এক কথায় UX ডিজাইন এর প্রসেসগুলো কি কি ?UX যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে

  1. Information Architecture
  2. Sketch
  3. Prototype
  4. UI Design
  5. Accessibility
  6. Credibility
  7. Usability
  8. Development

এই প্রসেসগুলোর আরো অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে। তাছাড়া প্রোডাক্ট ডিজাইনের সময় কিছু ফিচার অবশ্যই থাকতে হবে সেই প্রোডাক্টের মধ্যে:

১.প্রোডাক্টটি ইউজফুল হওয়া

২. প্রডাক্টটি ইউজেবল হওয়া

৩. প্রডাক্টটি ফাইন্ডেবল হওয়া

৪. প্রডাক্টটি ক্রেডিবল হওয়া

৫. প্রডাক্টটি এক্সেসিবল হওয়া

৬. প্রডাক্টটি ডিসায়ারেবল হওয়া

আজ এই পর্যন্তই। ইনশা আল্লাহ পর্যায়ক্রমে এগুলো নিয়ে একটু একটু করে বিস্তারিত পর্ব লিখবো।ভালো লাগলে অবশ্যই উৎসাহ মূলক কমেন্ট এবং লাইক আশা করছি। আর অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার দিবেন। আর আমার সকল পোস্টগুলো পড়তে হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবেন। তবে হ্যাশ ট্যাগে সব পোস্ট পাবেন না। যেগুলো এই বছর থেকে করছি সেগুলোই পাবেন।

#learnwithtahmid

আরে কেউ কপি করতে চাইলে অবশ্যই ক্রেডিট এবং হ্যাশট্যাগ সহকারে কপি করবেন। আর চাইলে আমার নিয়মিত আপডেট পেতে আমার ব্যক্তিগতগ্রুপে এ্যাড হতে পারেন: https://fb.com/groups/learnwithtahmid